ওয়েব ডেস্ক: জনপ্রিয় তারকা তাহসান খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির এক গ্রাহক। মামলার পর তাহসান, মিথিলা ও ফারিয়ার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করছে সংস্থাটি। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার পর মিথিলা ও ফারিয়া উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছেন। আর তাহসান অবস্থান করছেন দেশের বাইরে। এছাড়া ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে ১০ জানুয়ারি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিব হাসান বলেন, মিথিলা ও ফারিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। তাহসান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাহসান, মিথিলা ও ফারিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মামলার বাদী সাদ স্যাম রহমান বলেন, তাহসান খানকে আমি রোল মডেল মনে করি। তার ওপর আস্থা রেখেই আমি ইভ্যালিতে মোটরসাইকেল অর্ডার করেছি। এছাড়া মিথিলা ও ফারিয়া আছে জেনে আমি আরেকটু আস্থা পেয়েছিলাম। তাহসান, মিথিলা ও ফারিয়া বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্নভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণ করে আমাকেসহ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আমি আদালতে মামলা করেছি।
এর আগে গত সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়ার আট সপ্তাহের আগাম জা
মিন মঞ্জুর করেন। এসময় মিথিলা ও ফারিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এই দুই অভিনেত্রীর জামিনের আইনজীবী জেসমিন সুলতানা ওইদিন বলেন, জামিনে থাকাকালীন পুলিশ যাতে এ দুই অভিনয়শিল্পীকে কোনো প্রকার হয়রানি না করে সে ব্যাপারেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জামিনের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মিথিলা বলেন, আদালত বলেছেন, যে মামলাটি আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সেটার আসলে খুব একটা ভিত্তি নেই, ভিত্তিটা স্ট্রং নয়। সেই কারণে আমাকে আগাম জামিন দিয়েছেন। আইনের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি আশা করছি যে, শিল্পীরা হয়রানির শিকার হবে না। শুধু এখন নয়, ভবিষ্যতেও।
ভবিষ্যতে এধরনের কাজ করার সময় আরও সতর্ক হয়ে কাজ করবেন কি না এমন প্রশ্নে এই অভিনেত্রী বলেন, অবশ্যই সতর্ক হয়ে কাজ করবো। আমি বাংলাদেশের ১০০টির বেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। তবে এ ধরনের একটা হয়রানিমূলক পরিস্থিতির জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।
তিনি আরও বলেন, অসম্ভব হয়রানির ভেতর দিয়ে আমি যেটা শিখলাম, আমাদের মিডিয়ার এসব ইস্যু ডিল করার জন্য সেভাবে কোনো এজেন্সি নেই, ম্যানেজার নেই, আমাদের ইনডিভিজুয়ালি ডিল করতে হয়।
ইভ্যালির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক নাকি ভুল ছিল এমন প্রশ্নে এ তারকা বলেন, এই হয়রানির ভেতর দিয়ে যাওয়াটা আমি ডিজার্ভ করি না।
তারও আগে ২১ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে তাহসান, মিথিলা ও শবনম ফারিয়াসহ নয়জনের নামে মামলার আবেদন করেন সাদ স্যাম রহমান নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রাজধানীর ধানমন্ডি থানাকে মামলার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানা মামলার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নেয়। পরের দিন মামলাটি থানা থেকে আদালতে পাঠানা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ১০ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রেফতার ইভ্যালি এমডি মোহাম্মদ রাসেল, তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন, আকাশ, আরিফ, তাহের ও মো. আবু তাইশ কায়েস।
সাদ স্যাম রহমান তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, তাহসান, মিথিলা ও শবনম ফারিয়া ইভ্যালির বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। তাদের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডে আস্থা রেখে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পণ্য কিনতে বিনিয়োগ করেন তিনি। তার বিনিয়োগ করা টাকার পরিমাণ তিন লাখ ১৮ হাজার টাকা, যা তিনি এখনো উদ্ধার করতে পারেননি। এ তারকাদের কারণেই তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
জানা যায়, ইভ্যালির শুভেচ্ছাদূত ছিলেন তাহসান। মিথিলা ছিলেন ইভ্যালি লাইফস্টাইলের শুভেচ্ছাদূত। এছাড়া শবনম ফারিয়া প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন।